Unordered List

Definition List

গাজায় পানির খোঁজে যাওয়া ছয় শিশুকে হত্যা করল ইসরায়েল

 

গাজায় পানির খোঁজে যাওয়া ছয় শিশুকে হত্যা করল ইসরায়েল



গাজায় খাবার পানি সংগ্রহ করতে গিয়েও ইসরায়েলি নৃশংসতার শিকার হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। নির্বিচার গুলি ও বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে তাঁদের ওপর। আজ রোববার পানি সংগ্রহের সময় নতুন করে অন্তত ১০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের মধ্যে অন্তত ৬ জন শিশু। গাজায় খাবার ও পানির তীব্র সংকটের মধ্যেই এ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল।

ঘটনাটি ঘটেছে মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে একটি পানি সরবরাহকেন্দ্রে। এই শিবিরে সরবরাহ করা পানি পানযোগ্য নয় বলে আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। আজকের হামলায় সেখানে আরও ১৬ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে বিগত কয়েক মাসে প্রায় ১০ বার পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাল ইসরায়েল।

গাজার চিকিৎসা সূত্র থেকে জানা গেছে, পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া ১০ জনসহ আজ ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকাটিতে ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। আর আগের দিন শনিবার নিহত হয়েছেন অন্তত ১১০ জন। এর মধ্যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের আশায় গিয়ে হামলায় নিহত হন ৩৪ জন।



অনাহারে ৬৭ শিশুর মৃত্যু

ইসরায়েল টানা ১১ সপ্তাহ গাজা অবরোধ করে রাখার পর গত ২৬ মে উপত্যকাটিতে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করে বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফ। এর পর থেকে সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন আট শতাধিক ফিলিস্তিনি। জিএইচএফের ত্রাণ সরবরাহের পদ্ধতি ও খাবারের মান নিয়ে সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘও।

গাজা থেকে আল-জাজিরার সংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, জিএইচএফ থেকে একজনকে পুরো পরিবারের খাবারের একটি পার্সেল দেওয়া হচ্ছে। এই খাবার ক্ষুধার্ত শিশু ও পরিবারের সদস্যদের জন্য যথেষ্ট নয়।’ শনিবার গাজার জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গাজায় অনাহারের কারণে অন্তত ৬৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

খাদ্য ও পানির অভাবে গত মার্চ থেকে গাজায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউ। সে সময় থেকে উপত্যকাটি অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে সেখানে বাইরে থেকে কোনো ত্রাণসহায়তা নিয়ে আসতে পারেনি ইউএনআরডব্লিউএ।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে দেশটিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ইসরায়েল থেকে প্রায় আড়াই শ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। সেদিন থেকেই উপত্যকাটিতে নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ।

হামাসকে দোষারোপ ইসরায়েলের

গাজায় চলমান নৃশংসতার মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা। এ লক্ষ্যে ৬ জুলাই থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় পরোক্ষ আলোচনায় বসেছিল হামাস ও ইসরায়েল। দুই পক্ষই ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছিল। তবে সূত্রের বরাতে এএফপি জানতে পেরেছে, ইসরায়েলের কারণে ওই আলোচনায় বাধা এসেছে।

সূত্র বলেছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার চায় হামাস। তবে আলোচনার সময় উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন নিয়ে কিছু মানচিত্র উপস্থাপন করেছে ইসরায়েল। হামাস মনে করছে, ওই মানচিত্র থেকে বোঝা গেছে যে সেগুলোর মাধ্যমে গাজায় উল্টো নতুন করে সেনা মোতায়েন করা হবে। তাই হামাস এটি মেনে নেবে না।

এমন পরিস্থিতিতে দুই পক্ষকে আলোচনা স্থগিত রাখতে বলেছে মধ্যস্থতাকারীরা। সূত্র জানিয়েছে, দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সফরের আগপর্যন্ত আলোচনা স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে আলোচনা থেমে যাওয়ার জন্য হামাসকে উল্টো দোষারোপ করেছে ইসরায়েল। তারা বলেছে, হামাস আলোচনায় ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে না।

এএফপির কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেন, আলোচনায় নমনীয়তা দেখানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তবে হামাস একগুঁয়ে আচরণ করছে। একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মধ্যস্থতাকারীরা যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা হামাসের অবস্থানের কারণে বাধার মুখে পড়ছে।


No comments:

Powered by Blogger.