Unordered List

Definition List

বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের রাস্তা দেখেন: রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ

 

বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের রাস্তা দেখেন: রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে তীব্র বক্তব্য দেন। তিনি সরাসরি রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘এখনো সময় আছে, বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের পথ খুঁজে নিন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন আমরা মানি না, এবং আপনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। যদি আপনি মনে করেন, শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করতে পারবেন, তবে আপনি ভুল করছেন। এই ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার পুনর্বাসন এই দেশে আর কোনো দিন হবে না। তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে, এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে।’’

https://decorationmercifulmonth.com/jmb6krjp?key=7155045e5f40b3afa56d58d7faca078a




সমাবেশটি ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত মশাল মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত হয়। এই বক্তব্যের মাধ্যমে হাসনাত আবদুল্লাহ রাষ্ট্রপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তাঁকে বঙ্গভবন থেকে সরে এসে সত্যের পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন, যা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মশাল মিছিল ও সমাবেশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত মশাল মিছিলটি ঢাকার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আবার ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। ‘‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’’, ‘‘ছাত্রলীগের দিন শেষ’’ ইত্যাদি স্লোগান তুলে তারা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান।

মশাল মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ আরো বলেন, ‘‘আমাদের দেশে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড আজ শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’’ তিনি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘‘যদি আড়াই মাস পরে শিক্ষার্থীদের রাজু ভাস্কর্যে এসে দাঁড়াতে হয় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও তাদের গ্রেপ্তারের জন্য, তবে আপনাদের দায়িত্ব কী?’’

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি

হাসনাত আবদুল্লাহ সমাবেশে তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন যে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আওতায় আনতে হবে। তিনি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘যদি আপনি ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের আওতায় না আনতে পারেন, তবে শহীদ এবং আহতদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।’’

তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ১৫ জুলাইয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কবরস্থ হয়ে গেছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘তারা সীমান্তের ওপারে ভারতে বসে যতই ষড়যন্ত্র করুক, ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনর্বাসন বাংলাদেশে আর হবে না।’’ হাসনাতের মতে, ছাত্রলীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। তাঁর মতে, শেখ হাসিনা এবং তাঁর দলকে পুনর্বাসন করার কোনো সুযোগ নেই, এবং জনগণের চাপের মুখে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি

সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং পুলিশ কর্মকর্তাদেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যদি মনে করেন যে আপনাদের পোস্ট অপরিহার্য, তবে আপনি ভুল ভাবছেন। শেখ হাসিনাও নিজেকে অপরিহার্য মনে করেছিল, কিন্তু বাংলার ছাত্র–নাগরিক তাঁর বিকল্প খুঁজে নিয়েছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ–প্রশাসন যেভাবে অসহযোগিতামূলক আচরণ করছে, যদি তারা মনে করে শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করবে, তবে তাদের বিকল্প খুঁজে নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। প্রয়োজনে আমরা ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফোর্স গঠন করব।’’ এর মাধ্যমে তিনি প্রশাসনকে স্পষ্ট বার্তা দেন যে, জনগণকে অবজ্ঞা করলে তাদের বিকল্প শীঘ্রই তৈরি হবে এবং সেই বিকল্প তাদের দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত থাকবে।

গণমাধ্যমের সমালোচনা

হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে কিছু গণমাধ্যমেরও কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘গত ১৬ বছর ধরে যেসব কলম শেখ হাসিনার পক্ষে লিখেছে, সেসব কলম আবার চালু হয়েছে। যেসব মেরুদণ্ড শেখ হাসিনার কাছে দাসখতের বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে, সেসব মেরুদণ্ড আবার সোজা হওয়ার চেষ্টা করছে।’’

তিনি উল্লেখ করেন যে, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে শক্তিশালী করার জন্য যেসব গণমাধ্যম কাজ করেছে, সেসব গণমাধ্যমের পুনর্বাসন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ৫ আগস্টের পর এসব গণমাধ্যমের কবর রচিত হয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ

সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘‘১৫ জুলাইয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয়ে গেছে। ৫ আগস্ট তাদের রাজনৈতিক কবর রচিত হয়েছে।’’ এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, ছাত্রলীগের দিন শেষ হয়ে গেছে এবং ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসেবে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ আর নেই। তিনি আরো বলেন, ‘‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, তাদের ফ্যাসিবাদী শক্তিকে আর কোনোদিন পুনর্বাসন করা হবে না।’’

সমাপ্তি

হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধুমাত্র একটি ছাত্র আন্দোলন নয়, বরং এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাঁর বক্তব্যে ফ্যাসিবাদ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং শেখ হাসিনার শাসন থেকে মুক্ত একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।



No comments:

Powered by Blogger.