Unordered List

Definition List

মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা শাহাদাতের শপথ আগামী সপ্তাহে

 

মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা শাহাদাতের শপথ আগামী সপ্তাহে


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের শপথ গ্রহণের বিষয়টি আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। ২০২১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বিজয়ী হলেও, পরে আদালতের রায়ে শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়া চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজনীতিতে একটি বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষত বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে।

https://decorationmercifulmonth.com/v4zc751r?key=8d93228012e2c3e57bdd254aaa578ac6


শাহাদাত হোসেনের নির্বাচনী যাত্রা

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে মাত্র ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। এই বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হলেও, শাহাদাত হোসেন নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এবং ভোট গ্রহণে কারচুপি হয়েছে।

শাহাদাত হোসেনের মামলার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল আদালত তদন্ত করে এবং ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর রায়ে ঘোষণা দেয় যে, ২০২১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা অবৈধ ছিল। আদালত তখন ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেয়। এই রায়ের পর নির্বাচন কমিশন দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং শাহাদাতকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।

মেয়রদের অপসারণ ও প্রজ্ঞাপন সংশোধন

শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা ছিল, বিশেষত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর। ওই আন্দোলনের ফলে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখে পড়ে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়, যার মধ্যে চট্টগ্রামের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীও ছিলেন। সরকার তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এই পরিস্থিতিতে শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।

তবে ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের জন্য ১৯ আগস্টের প্রজ্ঞাপনের সংশোধনী আনে। প্রজ্ঞাপনের ৩ নম্বর ক্রমিকটি বিলুপ্ত করে, যা মূলত মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর অপসারণের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। ফলে শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের আর কোনো আইনি বাধা থাকলো না।

নির্বাচন ও এর পরবর্তী ঘটনা

২০২১ সালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনটি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ এবং সহিংস। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন, তবে ভোট পড়েছিল মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা খুবই কম। ভোটের দিন বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, গোলাগুলি এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যেখানে কয়েকজন নিহতও হন। এসব সহিংসতার কারণে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, বরং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দ্বারা ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা ও জোরপূর্বক ভোট আদায় করা হয়েছে।

আদালতের রায় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

শাহাদাত হোসেনের মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের রায় বিএনপির জন্য একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিএনপি অনেকদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ দেশে নেই এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। শাহাদাতের মেয়র পদে শপথ গ্রহণ বিএনপির রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, বিশেষত চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ এই রায়ের বিরুদ্ধে খুব একটা প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা যেতে পারে। মো. রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন এবং সেগুলো ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছিল। কিন্তু আদালতের রায়ের পর তাঁর মেয়র পদ হারানো আওয়ামী লীগের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

শপথ গ্রহণ ও আগামীর পরিকল্পনা

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ১৭ অক্টোবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন যে, শাহাদাত হোসেনের শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। শপথ গ্রহণের পর শাহাদাত হোসেনের প্রধান দায়িত্ব হবে চট্টগ্রামের জনগণের সেবা করা এবং শহরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। তবে তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নাগরিকদের প্রত্যাশা মেটানো তাঁর জন্য সহজ হবে না।

শাহাদাত হোসেন ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। তিনি বলেছেন যে, তাঁর মূল লক্ষ্য হবে চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক এবং পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি ট্রাফিক সমস্যার সমাধান, জলাবদ্ধতা নিরসন, এবং নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য জরুরি সেবা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করছেন।

রাজনৈতিক প্রভাব ও সমর্থন

শাহাদাত হোসেনের শপথ গ্রহণ বিএনপির জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক জাগরণের সূচনা হতে পারে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতি অনেকটাই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। বিএনপির সমর্থকরা আশা করছেন যে, চট্টগ্রামের মতো একটি বড় শহরে মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনের শপথ গ্রহণ দলটির জন্য বড় ধরনের বিজয় এবং জনপ্রিয়তার প্রমাণ হতে পারে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগও চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করবে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং বন্দরনগরী হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই চট্টগ্রামে তাদের সমর্থন বাড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।

উপসংহার

শাহাদাত হোসেনের শপথ গ্রহণ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আদালতের রায়ে তাঁর বিজয় বিএনপির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক অর্জন। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এই পরিবর্তন কেবলমাত্র শহরের উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে না, বরং দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক চিত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এখন দেখার বিষয়, শাহাদাত হোসেন কীভাবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেন।

No comments:

Powered by Blogger.