আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে: আসিফ নজরুল
আইন ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন যে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে, তবে এটি অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভরশীল। তিনি এটিকে তাঁর প্রাথমিক অনুমান বলে উল্লেখ করেন, যার সঙ্গে বেশ কিছু ধাপ ও শর্তাবলী জড়িত।
নির্বাচনের সময়সূচি ও প্রয়োজনীয় ধাপসমূহ
ড. আসিফ নজরুলের মতে, নির্বাচনের জন্য প্রধান যে বিষয়গুলোর প্রয়োজন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো একটি সঠিক এবং হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরি করা। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আর এটি করার জন্য প্রথমে একটি সার্চ কমিটি গঠন প্রয়োজন, যা পিএসসির চেয়ারম্যানের মাধ্যমে করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। ভোটার তালিকা সঠিকভাবে তৈরি করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করা সম্ভব নয়।
তিনি এও জানান যে, কিছুদিনের মধ্যেই সার্চ কমিটি গঠন হবে এবং এরপর নির্বাচন কমিশনও গঠিত হবে। তবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, নির্বাচন কমিশন ছাড়া কেউই সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুতির আদেশ দিতে পারে না। প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে নয়, এটি নির্বাচন কমিশনের আদেশেই সম্পন্ন হবে।
ভোটার তালিকা ও নির্বাচন প্রসঙ্গে সমালোচনা
আসিফ নজরুল ২০২৪ সালের ভোটার তালিকার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, গত নির্বাচনে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তাঁর মতে, সেই সময়ের ফ্যাসিস্ট সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে পরিস্থিতি কী হতে পারে তা নিয়ে ভয় পেয়েছিল, যার ফলে তারা এমন একটি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল। তিনি মতিউর রহমান চৌধুরীকে এই বিষয়ে অনুসন্ধান করার আহ্বান জানান এবং বলেন যে, এই ভুয়া ভোটার তালিকার কারণেই গত নির্বাচনে নানান সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও তার গুরুত্ব
নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সময়ে এমন একটি নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন, যা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, কোনো ভুয়া নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন সম্পন্ন করা জনগণের আশা নয়। তিনি হাবিবুল আউয়াল কমিশনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই কমিশন থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো আশা নেই। কেউ এ ধরনের নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার স্বপ্ন দেখতেও পারে না।
নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে প্রথম যে কাজটি করা হবে তা হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, যা একটি নির্ভরযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। ফ্যাসিস্ট সরকারের আগের নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি সমালোচনা করে বলেন যে, সঠিক ভোটার তালিকা ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
অন্যান্য প্রসঙ্গ
অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, দ্রব্যমূল্যের সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়। আসিফ নজরুল এসব বিষয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেন এবং বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে বলেন যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা রক্ষা ও সঠিকভাবে কাজ করার জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত জরুরি।
ক্ষমতা ও উপদেষ্টা পরিষদ
অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুলকে প্রশ্ন করা হয় যে তিনি কি সবচেয়ে ক্ষমতাধর উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল প্রচার এবং উপদেষ্টা পরিষদের অন্য উপদেষ্টাদের মতো তাঁরও ক্ষমতা সমান। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র নেতাদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে আলোচনা করে এবং যৌক্তিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
আসিফ নজরুলের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলো নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। তিনি বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং এর কার্যক্রম নিয়ে গভীর সমালোচনা করেছেন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং নিরপেক্ষ সংস্থা ছাড়া নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
No comments: