শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, থাকবেন: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, থাকবেন: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে তিনি কিছুদিন আরো সেখানে থাকবেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল আজ ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনার ভারত সফর: জল্পনা-কল্পনার অবসান
সম্প্রতি শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। কেউ কেউ বলছিলেন, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন, আবার অন্যরা বলছিলেন যে তিনি ভারত সরকারের বিশেষ ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়ে ভারত এসেছেন। এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ে নানা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তবে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আজ নিশ্চিত করেছেন যে শেখ হাসিনা ভারতের মাটিতে আছেন এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনার নিরাপত্তা
মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, শেখ হাসিনা অল্প সময়ের নোটিশে নিরাপত্তার কারণে ভারতে আসেন। তবে কবে এবং কী পরিস্থিতিতে তিনি ভারত এসেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়নি। এর মানে দাঁড়ায়, শেখ হাসিনার ভারত সফর পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না, বরং নিরাপত্তার কারণে হঠাৎ করে নেওয়া একটি পদক্ষেপ ছিল। তবে, তিনি কবে পর্যন্ত ভারতে থাকবেন এবং এর পরের ধাপ কী হবে, এ নিয়ে মুখপাত্র কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শেখ হাসিনার অবস্থানের পেছনে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট রয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই পরোয়ানা অনুসারে, তাঁদের ১৮ নভেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে রণধীর জয়সোয়াল জানান, ভারত এই প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত আছে, তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেননি। তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ভারত এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছে না, বরং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
জাতীয় দিবস বাতিল নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চসহ ৮টি জাতীয় দিবস বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন এই দিবসগুলোকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হতো। ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে রণধীর জয়সোয়াল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এটি স্পষ্ট যে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে চায়, বিশেষ করে এমন একটি সময় যখন পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ।
ভিসা প্রসঙ্গ: বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের নীতিতে স্থবিরতা
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জয়সোয়াল জানান, বর্তমানে শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজন এবং চিকিৎসার জন্য সীমিত আকারে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে ভিসা প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মানে দাঁড়ায়, ভারতের তরফ থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে এবং বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে, তা ভিসা প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ এবং দুর্গাপূজার মণ্ডপে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ভারত ইতিমধ্যেই একটি বিবৃতি দিয়েছে যেখানে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের উচিত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন করা, কারণ এসব ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনার পরবর্তী পদক্ষেপ: কী হতে পারে?
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। শেখ হাসিনা কি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ভারতে এসেছেন, নাকি অন্য কোনো কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখানে রয়েছেন, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা চলছে, তাতে শেখ হাসিনার এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এমনও হতে পারে যে, শেখ হাসিনা ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য কৌশল নির্ধারণ করছেন। বিশেষ করে যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, তবে ভারত তাঁর জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে। এছাড়া, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার এই অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
No comments: